অস্পষ্টতার আবরণ

এক আশ্চর্য ঘটনা ঘটলো আজ। আশ্চর্য না বলে অলৌকিক বা ভৌতিক বললে ও চলে।
 ইদানিং খুব গরম পড়েছে, প্রাণ অতৃষ্ট হয় উঠেছে। এ.সি ছাড়া এক মিনিটও তিষ্ঠানো যাচ্ছে না। রাতের খাওয়া দাওয়া সেরে এসেই বেডরুমের দরজাটা বন্ধ করে এ.সি চালালাম। আমি আর মা বসে আছি এইরকন্ডিশনেড বেডরুমে। দু জনেই ফোন চালাতে খুব ব্যস্ত, আজকাল যা হয় আর কি। আমার বাবার b-shift ডিউটি চলছে, মনে দুপুর ২টো থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ডিউটি। তখন প্রায় ১০টা বাজতে যায়, ফোনে এতটাই মগ্ন ছিলাম যে ঠিক বাজে কটা খেয়াল করা হয় নি, ব্যাস এত টা খেয়াল ছিল যে ১০টা বাজতে যায় আর বাবার আসার সময় হয় গেছে।
বাবার গাড়ির আওয়াজ আমি ঘুমিয়ে ঘুমিয়েও চিনতে পারি, সেই কোন ছোটবেলার থেকে শুনে আসছি, ঘুমের ঘোরেও তো চেনাটাই স্বাভাবিক। তো ফোনের মায়াবী জগতে লীন থেকেও বাবার গাড়ির আওয়াজটা কানে এলো। আসারই তো কথা, ১০টা বাজে, সবকিছুই তো নিয়ম মাফিক চলছে, কোনো কিছুই তো নিয়মের ব্যাতিক্রম হচ্ছে না, তাই আমিও ডুবে আছি আমার মায়াবী জগতের মায়ায়।
বাবা ডিউটি থেকে এসে নিজেই বাইরের গেট খুলে গাড়ি বারান্দায় রেখে ভিতরে আসে। তা আসতে ৫-৭ মিনিট মতন লেগে যায়। আবার কোনো নিয়মের ব্যাতিক্রম না করে, আমার গাড়ির আওয়াজ শোনার মিনিট পাঁচেক পর ই আমাদের বেডরুমের বন্ধ দরজা ধাক্কানোর শব্দ এলো। দরজাটা বেশ জোরেই ধাক্কানো হচ্ছে, প্রয়োজনের থেকে একটু বেশিই জোরে। সেটাও কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা নয়, আমার বাবার মাঝে মাঝেই রসিকতা করার ইচ্ছে জাগে, তখন এই সব কান্ড করে।
হটাৎ এত জোরে দরজা ধাক্কানোর শব্দ আমাকে আর মাকে আমাদের মায়াবী জগত থেকে টেনে নিয়ে আসে ইহা লোকে। এত জোরে দরজা ধাক্কানো শুনে আমরা দুজনেই একটু আচম্ভীত হয় মুখ চাওয়া চাওই করছিলাম। কিছুক্ষণ পর আমি বললাম বাবা এসেছে হয়তো। মা উঠে দরজা টা খুলে দেখে কেউ নেই, কিন্ত এতেও আমি অবাক হই নি, কারণ এখনো কিছুই নিয়মের ব্যাতিক্রম হয় নি। ওই যে বললাম না বাবার মাঝে মাঝে রসিকতা করার স্বভাব আছে, তাই দরজা ধাক্কানো শুনে দরজা খুলে কাউকে না দেখেও আমি আর মা কেউ ই বিচলিত হলাম না। মা তো দরজার পিছনে খুঁজছে বাবা কোথায় লুকিয়েছে দেখার জন্য। কিন্ত হটাৎ ফ্রন্ট দরজায় নজর পড়তেই মা থমকে যায়। সেই দরজা তো বন্ধ, তাড়াতাড়ি ঘড়ির দিকে তাকালো একবার। একটু বিস্মিত মুখে বললো "তোর বাবা তো আসেনি, এখন তো সবে ১০টা বাজছে, ১০:৩০টার আগে তোর বাবা কখনো আসে? আর সামনের গেট টাও বন্ধ।
এবার আমার অবাক হবার পালা। চট করে ফোন স্ক্রিনে সময়টা দেখলাম। 9.59 p.m ভাসছে স্ক্রিনে। পুরো ব্যাপারটা খুব আশ্চর্যকর লাগছিল। স্পষ্ট শুনলাম বাবার গাড়ির আওয়াজ, তার 5 মিনিট পরেই দরজা ধাক্কানোর আওয়াজ, তাই তো এত কোনফিডেন্টলি মা কে বললাম দরজাটা খুলতে।
প্রারম্ভিক বিস্ময় কেটে যেতেই ব্রেন ঘোড়ার মতন ছুটতে আরম্ভ করলো, এই আশ্চর্যকর ঘটনাটার মাথা মুন্ডু খোঁজার জন্য। মা'র ব্রেন আমার ব্রেনের থেকে আগে ছুটে একটা প্রস্তাব নিয়ে এলো, অঙ্ক মেলানোর জন্য।
মা বললো হয়তো ভূমিকম্প হয়েছে। প্রস্তাব টা মন্দ লাগলো না আমার ব্রেনের, ঝট করে মেনেও নিলো। তবু মনে কোথায় যেন আটকাছে। এত জোরে ভূমিকম্প হলো, দরজা এত জোরে কাম্পল অথচ আমরা কিছুই টের পেলাম না, এমনকি ঘরের অন্য একটাও জিনিস হিল্লো না! না, অঙ্কটা তো মিলছে না। মা'র ব্রেনও বোধহয় বুঝতে পেরেছিল যে অঙ্কটা মিলছে না তাই ছুটে গিয়ে আর একটা প্রস্তাব জোগাড় করল।
মা বললো, "তুই হয়তো দরজাটা ঠিক করে লাগাস নি, একটু ফাঁকা থেকে গেছিল হয়তো তাই কোনো গাড়ির আওয়াজে ভাইব্রেট করে উঠেছে।"
প্রস্তাব টা মন্দ নয় অন্তত প্রথেমের থেকে তো ভাল। তাও কোথাও যেন মনে এখনো আটকাছে, এখনো মনে হচ্ছে অঙ্কটা ঠিক মিলছে না, কিন্তু এবার যুক্তিটাও ঠিকই মনে হচ্ছে।
কিছুক্ষণ চুপটি করে বসেরইলাম, কি ভাববো কিছুই বুঝতে পারলাম না। হটাৎ গা টা কেমন ছম-ছম করে উঠলো। ব্রেন মনে হয় আর অঙ্কটা মিলাতে পারল না, তাই এবার অঙ্ক মিলানোর দায়িত্ব মন নিলো। মন তো ঘটনাটার মিসিং পয়েন্ট গুলো খুঁজতে খুঁজতে অলৌকিকতার আবছা পথের দিকে রওনা দিলো। এইদিকে আবার ব্রেনও আমার একটা হাত চেপে ধরে আছে, সে কোনোমতেই আমাকে যৌক্তিকতার দীপ্তমান পথ ছাড়তে দিতে চায় না। কিন্তু এই যৌক্তিকতার প্রভাতে সব কেমন যেন ফ্যাকাশে লাগছে। তাই নির্ণয় নিলাম যে একবার মনের হাত ধরে অলৌকিকতার দুর্বোধ্য পথ ধরেই একটু এগোই।
অঙ্ক হয়তো মিলবে না, ঘটনাটার মাথা মুণ্ডুও হয়তো খুঁজে পাব না। তা না হয় নাই পেলাম, সব সময় এত স্পষ্টতার কি প্রয়জন? এই ঘটনাটা থাকুক না একটু অস্পষ্টতার আবরনে। একবার অঙ্ক না মিললে কি ক্ষতি আছে?

Comments

Popular posts from this blog

Female Angst: The Social Cost of Rape

The Red Wine

The Motherhood Project: Introduction